বাংলা রচনা - ভাষাশহিদদের কথা | পঞ্চম শ্রেণীর রচনা

 বাংলা  রচনা ; ভাষাশহিদদের কথা


ভাষাশহিদদের কথা

ভূমিকা:

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’

প্রতিটি দেশ ও জাতিরই নিজস্ব কিছু জাতীয় দিন থাকে। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিরও আছে। ওপরের পঙ্্ক্তি দুটি আমাদের সেই দিনটির কথা মনে করিয়ে দেয়, যেদিন মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে এ দেশের সাহসী তরুণেরা বুকের রক্ত দিয়েছিল।

একুশে ফেব্রুয়ারি: 

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এ দেশের ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। এতে ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়। এর পর থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ভাষার জন্য রক্ত দিতে হয়েছে—এমন ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। তাই জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ভাষাশহিদদের পরিচয়: 

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে অনেকেই হতাহত হয়। পুলিশ অনেককে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তাঁদের অনেকের লাশও পাওয়া যায়নি। ওই দিন যাঁরা শহিদ হন তাঁদের কয়েকজন হলেন

আবুল বরকত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবুল বরকত। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যোগ দিয়েছিলেন মিছিলে। ছিলেন সামনের কাতারে। পুলিশের একটি গুলি এসে লাগে তাঁর বুকে। লুটিয়ে পড়েন রাজপথে।

রফিকউদ্দীন আহমেদ: রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যে মিছিল বের হয়েছিল, তাতে তিনি যোগ দেন। মিছিল লক্ষ্য করে পুলিশ যখন গুলিবর্ষণ করে, তখন একটি গুলি তাঁর মাথার খুলি উড়িয়ে নেয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মৃত্যু হয়।

আবদুল জব্বার: ময়মনসিংহের গফরগাঁয়ে আবদুর জব্বারের বাড়ি। গরিব পরিবারের সন্তান লেখাপড়া বেশি করতে পারেননি। ঢাকায় এসেছিলেন শাশুড়ির চিকিৎসা করাতে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল বের হলে তিনি তাতে যোগ দেন। ভুলে যান অসুস্থ শাশুড়ির কথা। হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে তাঁর শরীরে। সবাই ধরাধরি করে তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। তারপরও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।

আমাদের গর্ব: ভাষার জন্য যাঁরা শহিদ হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই দেশকে ভালোবাসতেন, মাতৃভাষাকে ভালোবাসতেন। তাই জীবন দিয়ে দেশের মর্যাদা, মাতৃভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে যাঁরা জীবন দিয়ে গেছেন, এসব ভাষাশহিদ আমাদের গর্ব।


উপসংহার: 

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার জন্য যাঁরা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, দেশ ও জাতি তাঁদের কখনোই ভুলবে না।যত দিন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি বেঁচে থাকবে, তত দিন বাংলার ইতিহাসে তাঁদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।


- খন্দকার আতিক, শিক্ষক উইল্‌স লিট্‌ল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url