৭ম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৩

৭ম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৩

৭ম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৩


৭ম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৩ : 

শুরুতেই ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দিয়ে জীবন ও জীবিকা বিষয়ের বাৎসরিক মূল্যায়ন কীভাবে পরিচালিত হবে, তার নিয়মাবলি শিক্ষার্থীদের জানাবেন। এই মূল্যায়ন চলাকালে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রত্যাশা কী সেটা যেন তারা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে। সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়নের জন্য নির্ধারিত কাজটি ভালোভাবে বুঝে নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিন যাতে সবাই ধাপগুলো ঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারে।

শিক্ষার্থীদের বাৎসরিক মূল্যায়নের জন্য প্রদত্ত কাজটি ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে সর্বমোট তিনটি সেশন বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রথম দুইটি সেশনে ৯০ মিনিট করে, এবং শেষ সেশনে তিন থেকে চার ঘণ্টা (বা বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনা অনুযায়ী) সময়ের মধ্যে নির্ধারিত কাজগুলো শেষ করবেন। তবে শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক বেশি হলে শিক্ষক শেষ সেশনে কিছুটা বেশি সময় ব্যবহার করতে পারবেন।

৭ম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা ২০২৩ :

বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের প্রদত্ত রুটিন অনুযায়ী সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ কাজ সেশন চলাকালেই করবে, বাড়িতে গিয়ে করার জন্য খুব বেশি কাজ না রাখা ভালো। লক্ষ রাখতে হবে, এই পুরো প্রক্রিয়া যাতে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি না করে এবং পুরো অভিজ্ঞতাটি যেন তাদেও জন্য আনন্দময় হয়।

উপস্থাপনে যথাসম্ভব বিনামূল্যের উপকরণ ব্যবহার করতে নির্দেশনা দেবেন, উপকরণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অভিভাবকদের যাতে কোনো আর্থিক চাপের সম্মুখীন হতে না হয়, সেদিকে নজর রাখবেন। শিক্ষার্থীদের মনে করিয়ে দিন, মডেল/পোস্টার/ছবি ইত্যাদির চাকচিক্যে মূল্যায়নে হেরফের হবে না। বরং বিনামূল্যের বা স্বল্পমূল্যের উপকরণ, সম্ভব হলে ফেলনা জিনিস ব্যবহারে উৎসাহ দিন।


বিষয়ভিত্তিক তথ্যের প্রয়োজনে যেকোনো উৎস শিক্ষার্থী ব্যবহার করতে পারবে। তবে কোনো উৎস থেকেই হুবহু তথ্য তুলে দেওয়া যাবে না, বরং উৎস থেকে তথ্য ব্যবহার করে সে নির্ধারিত সমস্যার সমাধান করতে পারছে কি না, এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারছে কি না তার উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করবেন।

বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য নির্ধারিত কাজ
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিখন অভিজ্ঞতা চলাকালে ইতোমধ্যে এই শ্রেণির জন্য নির্ধারিত সকল যোগ্যতা চর্চা করার সুযোগ পেয়েছে, সেগুলোর মধ্য থেকে বাৎসরিক মূল্যায়নের জন্য নিম্নলিখিত যোগ্যতাসমূহ নির্বাচন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী অর্পিত কাজটি সাজানো হয়েছে।

মূল্যায়নের প্রথম দিন (সময় : ১০ মিনিট)

(সংকেত: নিজ এলাকায় বিশেষ কোনো রোগ, যেমন-ডেঙ্গু বা স্বাস্থ্যবিষয়ক যেকোনো সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম; হাত ধোয়া ও সঠিক উপায়ে দাঁত ব্রাশের নিয়ম বিষয়ক কর্মসূচি; ধুমপানের কুফল সম্পর্কিত ক্যাম্পেইন; অপরিচ্ছন্নতার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি; প্রাথমিক চিকিৎসাধর্মী সচেতনতা; প্রবীণ প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্যসেবা (জ্বর মাপা, নখ কাটার নিয়ম, ওরস্যালাইন বানানো ইত্যাদি) অনুশীলন করানো বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে ছোট পরিসরে শিক্ষার্থীরা কাজ করতে পারে। যেমন- এলাকার বড়দের/বৃদ্ধ/শিশুদের নিয়ে উঠানে বা ছাদে বসে সচেতনতামূলক কথা বলা, ভিডিও দেখানো, আলোচনা করা, হাতে লেখা লিফলেট বিতরণ, হাতে আঁকা পোস্টার টানানো ইত্যাদি)
শিক্ষক যেভাবে পরিচালনা করবেন: এটি দলগত কাজ। পরিচালনার সুবিধার্থে নিচে বর্ণিত নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে-

ক) দলগতভাবে সামাজিক সমস্যা খুঁজে সমাধান বের করা (৪০ মিনিট)

শিক্ষার্থীদের ৬-৮ জন নিয়ে এলাকাভিত্তিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক দলে ভাগ করে দিন। এক একটি দলকে নিজ নিজ এলাকায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কী কী সমস্যা রয়েছে, যেগুলোর সমাধানে শিক্ষার্থীরা উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে, তার একটি তালিকা (অন্তত ৩ টি সমস্যার) তৈরি করতে বলুন।


উক্ত তালিকার সমস্যাগুলো থেকে সহজে এবং তাদের পক্ষে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব, এমন একটি সমস্যা বেছে নিতে বলুন। এবার উক্ত সমস্যার কী ধরনের সমাধান হতে পারে, তা দলগত আলোচনার মাধ্যমে খুঁজে বের করতে বলুন।
দলের সবাই মিলে প্রতিটি সমাধান বা সমস্যা সমাধানের উপায়গুলো পর্যালোচনা করতে বলুন এবং সবচেয়ে ভালো উপায়টি খুঁজে বের করতে বলুন। এরপর সমস্যা সমাধানের ধাপ অনুসরণ করে সমস্যাটির সমাধান করার একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে বলুন।

প্রতিটি দলকে দলগত কাজের প্রতিটি ধাপের ভিত্তিতে একটি পোস্টার তৈরি করে জমা দিতে বলুন। (মূল্যায়নের ৩য় দিন উপস্থাপনের জন্যে উক্ত পোস্টার আবার দলগুলোকে ফেরত দিবেন।)

খ) চিহ্নিত সমস্যার সমাধানের নির্দেশনা (১০ মিনিট)

বাড়িতে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে দলগতভাবে অথবা এককভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী সমস্যাটির সমাধানের উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করবে। যে দল/শিক্ষার্থী যে এলাকায় কাজটি সম্পন্ন করেছে, সে এলাকার অংশীজনদের মধ্য থেকে যেকোনো দুইজনের স্বাক্ষর ও মতামত সংগ্রহ করবে। বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা একটি কাগজে লিখে অংশীজনের মতামত বা স্বাক্ষরসহ মূল্যায়নের তৃতীয় দিন জমা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিন।

গ) হেলথ ক্যাম্পের জন্য প্রস্তুতি (৩০ মিনিট)

মূল্যায়নের ৩য় দিন শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দলকে হেলথ ক্যাম্পের জন্য স্টল তৈরি করতে হবে, তা জানিয়ে দিন। হেলথ ক্যাম্পে প্রতিটি দল যে যে কাজ করবে তা হলো- ক্যাম্প সাজানো, সমস্যা খুঁজি ও সমাধান বের করি’র পোস্টার উপস্থাপন, কেয়ার গিভিং স্কিল কোর্সের ব্যক্তিগত পরিচর্যা থেকে ১টি ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা থেকে ১টি কাজের ভূমিকাভিনয় প্রদর্শন। (ক্লাসরুম বা বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় হেলথ ক্যাম্প আয়োজন করা যেতে পারে।)


উক্ত কাজগুলো সুন্দরভাবে করার জন্য প্রতিটি দলকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে বলুন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলের সদস্যরা তাদের বাৎসরিক সঞ্চয় থেকে কে কত টাকা দিতে পারবে তার তালিকা তৈরি করে মোট টাকা হিসেব করতে বলুন। একজন সর্বোচ্চ ৩০ টাকা দিতে পারবে। কারো সঞ্চয় না থাকলে সে দেবেনা।

যত টাকা উঠবে, তার মধ্যেই ক্যাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বাজেট করতে হবে। ক্যাম্পের জন্য কিছু জিনিস শিক্ষার্থীদের তৈরি বা সংগ্রহ করতে হতে পারে, যেমন- স্বাস্থ্য পরিচর্যার ভূমিকাভিনয়ের জন্য থার্মোমিটার, হাত ধোয়ার উপকরণ, নেইল কাটার, চিরুনি, হাতে বানান লিফলেট, পোস্টার, ব্যক্তিগত পরিচর্যার ভূমিকাভিনয়ের উপকরণ ইত্যাদি।

হেলথ ক্যাম্প আয়োজনের পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নের পর কে কোন কাজ করবে তার দায়িত্ব ভাগ করে নিবে। কীভাবে যৌক্তিকতা ও নৈতিকতা বজায় রেখে উপকরণ ক্রয়/সংগ্রহ করবে, তা দলগত আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নিতে হবে। তবে কোনোভাবেই দলের নির্ধারিত বাজেটের বাইরে বায় করা যাবে না, তা জানিয়ে দিন। সকল দলকে পরিকল্পনা মাফিক সকল উপকরণসহ মূল্যায়নের ৩য় দিন হেলথ ক্যাম্পের আয়োজনের করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করুন।

ঘ) পরবর্তী কাজের নির্দেশনা (১০ মিনিট)

শিক্ষার্থীর মা বা বাবা বা অভিভাবক এবং বন্ধু বা আত্মীয়দের থেকে একজনের (মোট ২ জন) সাথে নিজ সম্পর্কে তাদেও ধারণা ও প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা করতে বলবেন। নিজ সম্পর্কে তাদের ধারণা ও প্রত্যাশা লিখে তাদের স্বাক্ষরসহ মূল্যায়নের দ্বিতীয় দিন আনার জন্য অনুরোধ করবেন।


পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য পরিচর্যার অনুশীলন ছক (পাঠ্যপুস্তকের ছক ৮.১, বিগত এক সপ্তাহের আলোকে আলাদা শীটে তৈরি করে) পূরণ করে মূল্যায়নের তৃতীয় দিন জমা দিতে হবে তা জানিয়ে দিন।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অভিভাবকের স্বাক্ষরসহ সঞ্চয়ের আর্থিক ডায়রি মূল্যায়নের তৃতীয় দিন জমা দিতে হবে তা জানিয়ে দিন। যেসব পি আই অনুযায়ী মূল্যায়ন করতে হবে: ৭.৩.১, ৭.৫.১, ৭.৭.২ (মূল্যায়নের তৃতীয় দিন পারদর্শিতার নির্দেশক যাচাই সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে।)

মূল্যায়নের দ্বিতীয় দিন (সময়: ৯০ মিনিট)

শিক্ষক যেভাবে পরিচালনা করবেন: এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একক কাজ। কাজটি পরিচালনার সুবিধার্থে নিচে বর্ণিত নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে-

ক) নিজেকে জানা (২০ মিনিট)

শিক্ষার্থীদের নিজের পছন্দ বা আগ্রহ এবং নিজের সামর্থ্য বা দক্ষতা চিহ্নিত করতে বলুন। পূর্বের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ সম্পর্কে অভিভাবক ও বন্ধু বা আত্মীয়দের ধারণা ছকে লিখতে বলুন (ছকটি বোর্ডে এঁকে দিন)।

খ) কাক্ষিত পেশার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ণ (৩০ মিনিট)

নিজেকে জানা ছকের আলোকে নিজের জন্য প্রযুক্তি নির্ভর একটি পেশা নির্বাচন করতে বলুন। ঝডঙঞ ডায়াগ্রাম ব্যবহার করে নির্বাচিত পেশায় নিজের সামর্থ্য, দুর্বলতা, সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করতে বলুন।
এরপর উক্ত পেশার উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য ছক অনুযায়ী (ছকটি বোর্ডে এঁকে দিন) স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করতে বলুন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইতোমধ্যেই সে কী কী কাজ বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে শুরু করেছে তার অভিজ্ঞতা (৩০-৫০ শব্দের মধ্যে) লিখতে বলুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url