বসনিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
বসনিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
অথবা
বসনিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বিশ্লেষণ কর
অথবা
বসনিয়া যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে লিখ
উত্তর :
ভূমিকা:
বসনিয়ার যুদ্ধ বা বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার যুদ্ধ হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক সামরিক যুদ্ধ। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষ সংশ্লিষ্ট ছিল, যার মধ্যে রয়েছে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং সেখানে বসবাসকৃত স্বতন্ত্র পরিচয়দাবীকৃত বসনীয় সার্ব ও বসনীয় ক্রোয়েট গোষ্ঠী, রেপুরিকা সেপার্সকা ও হার্জে বসনিয়া, যারা ছিল যথাক্রমে সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সহায়তা পুষ্ট।
১৯৯২ সালে ২৯ ফেব্রুয়ারি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা তাদের স্বাধীনতার ঘোষণা পাস করে। কিন্তু এ ঘোষণা বসনীয় সার্ব রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা প্রত্যাখান করে এবং নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এর ফলে সার্বিয়ান সরকারের প্রধান স্নোবদান মিলসোভিতের সহায়তায় বসনীয় সার্ব বাহিনী এবং যুগোশ্লাভপিপল'স আর্মি রাষ্ট্রটির সার্বীয় অংশ নিজেদের দখলে নিতে রিপাবলিক অব বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা আক্রমণ করে। এরপর সমগ্র বসনিয়া জুড়ে যুদ্ধ শুরু হয় এবং বসনিয়ার বিভিন্ন অংশের জাতিগত জনগোষ্ঠী এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
বসনিয়া যুদ্ধের কারণ:
বসনিয়া যুদ্ধের কারণ নিম্নরূপ:
১. ক্ষমতার স্বন্দ্ব:
সমাজতান্ত্রিক যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্র ভেঙে ছয়টি স্বাধীন দেশ আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৯২ সালের ১ মার্চ যুগোশ্লাভিয়ার কাছ থেকে বসনিয়া হার্জেগোভিনা স্বাধীনতা পায়। কিন্তু এ সময় সদ্য স্বাধীন দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তিন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বসনিয়াক নামে পরিচিতরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান। তারা স্বাধীন বসনিয়া গঠনের পক্ষে ছিল। অপর দুই জাতি বসনীয় ক্রোয়েট ও বসনীয় সার্বরাও নতুন করে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি তোলে। ক্রোয়েটরা প্রতিবেশী ক্রোয়েশিয়ার আর সার্বরা সার্বিয়ার সাথে এক হতে চেয়েছিল। যার দরুন যুদ্ধ। শুরু হয়েছিল।
২.জাতীয়তাবাদী আন্দোলন:
সার্বদের কর্তৃত্ব থেকে মুক্তি পেতে যুগোশ্লাভিয়ার মুসলমান ও ক্রোয়েটরা বরাবরই স্বাধীনতার দাবি জানায়। কিন্তু তাদের এ দাবির বৈধতা অর্জনের পথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও মার্কিন সরকার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারা গণভোটের শর্ত জুড়ে দেয়। বসনীয় সার্বরা গণভোট বর্জন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানায়। কিন্তু বসনিয়ার সরকার পূর্ব সমঝোতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী গণভোট দেয়। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ওই গণভোটে দেশটির ৬৪ শতাংশ নাগরিক একটি অভিভক্ত ও স্বাধীন বসনিয়া গড়ার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে ইউরোপীয় কমিউনিটির স্বীকৃতির দিনই ১৯৯২ সালের ৭এপ্রিল সার্ব আগ্রাসনের শিকার হয় বসনিয়া হার্জেগোভিনা।
৩. মুসলমানদের নির্মূল করা :
৪. ইসলামী মনোভাবের বিস্তার:
বসনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে ষাট ও সত্তরের দশকের দিকে ইসলামী পুনর্জাগরণ ঘটে। মার্শাল টিটোর জোট নিরপেক্ষ নীতির সুবাদে বসনীয় মুসলমানরা মুসলিম বিশ্বের সাথে যোগাযোগের সুযোগ পায়। যার ফলে মুসলমানদের মধ্যে জ্ঞানতৃষ্ণা বেড়ে যায় এবং ১৯৭৭ সালে সারায়েভো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চালু হয়। ১৯৮০ সালে মার্শাল টিটো মারা যান। কিন্তু সার্বরা বসনিয়ার ও কোসোভোর মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী মনোভাবের বিস্তার কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছিল না। যার দরুন বসনিয়ার যুদ্ধ
৫. যুগোশ্লাভিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টির পতন :
১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে যুগোশ্লাভিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টির পতন ঘটে। এসময় দেশটিতে রাজনৈতিক বিভেদ জোরদার হয়। ১৯৯১ সালের ২৫ জুন ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যুগোস্লাভিয়ার 'মুসলমান ও ক্রোয়াটরা সার্বদের কর্তৃত্বকে মেনে নিত না। যা বসনিয়ার যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে।
বসনিয়া যুদ্ধের ফলাফল: বসনিয়া যুদ্ধের ফলাফল নিম্নরূপ:
১. দুটো রাষ্ট্রের জন্ম:
বসনিয়া যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে যুগোশ্লাভিয়া ভেঙ্গে যায়। সোশালিস্ট ফেডারেল রিপাবলিক অফ যুগোশ্লাভিয়া ও সোশালিস্ট রিপাবলিক অফ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা নামের নতুন দুটো রাষ্ট্রের জন্য হয়। এর মধে হার্জেগোভিনা ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যার মোট জনগোষ্ঠীর ৪৪% মুসলিম বসনীয়, ৩১% অর্থোডক্স সার্বীয় এবং ১৭% ক্রোয়েশীয় ক্যাথলিক।
COMMENTS